বই পড়ার গতি বাড়াতে চান?
![]() |
বইপ্রেমীদের জন্য দ্রুতগতিতে বই পড়া এক অমূল্য দক্ষতা, যা বই পড়ার অভিজ্ঞতাকে আরো মজার করে তোলে। আরো বেশি গল্প উপভোগের সুযোগ করে দেয়, জ্ঞান অর্জনে সাহায্য করে।
পড়ার গতি বাড়াতে কিছু নির্দিষ্ট কৌশল চর্চা করতে পারেন, যাতে পড়ার গতি ও বোঝার ক্ষমতা দুটিই বাড়ে। দ্রুতগতিতে বই পড়ার জন্য এই কৌশলগুলি দেখে নিতে পারেন।
.
১. প্রিভিউ করা
প্রিভিউ হল পড়ার আগে যেকোনো কিছু একটু চোখ বুলিয়ে তা সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা নেওয়া।
এই কৌশলের মাধ্যমে কোনো কিছুর মূল আইডিয়া ও গঠন সম্পর্কে ধারণা পাবেন। লেখার হেডিং, সাবহেডিং ও হাইলাইট বা বোল্ড করা টেক্সটগুলি পড়ে নিলে আপনি এর বিষয়বস্তু সম্পর্কে একটি ধারণা তৈরি করে নিতে পারবেন। প্রস্তুতিমূলক এই ধাপ আপনার মস্তিষ্ককে প্রস্তুত করে, বিস্তারিত তথ্য বুঝতে ও মনে রাখতে সাহায্য করে।
.
২. পয়েন্টার বা নির্দেশক ব্যবহার করা
আঙুল, কলম বা ডিজিটাল কার্সরের মত পয়েন্টার বা নির্দেশক ব্যবহার করে চোখকে দিক নির্দেশনা দেওয়া যায়, ফলে মনোযোগ দেওয়া সহজ হয়।
এই কৌশলের কারণে একই সেকশন বা লেখা বার বার পড়তে হয় না, চোখ সামনের দিকে যায়। পয়েন্টার পদ্ধতির মাধ্যমে পড়ার অভিজ্ঞতা হয় মসৃণ ও ধারাবাহিক, চোখ এদিক-সেদিক যায় না, ফলে পড়ার গতি বাড়ে।
.
৩. চাংকিং বা খণ্ড পদ্ধতি
একটা একটা শব্দ না পড়ে কয়েকটি শব্দ একেবারে পড়ার পদ্ধতিকেই চাংকিং বা খণ্ড পদ্ধতি বলা হয়।
এই পদ্ধতিতে এক নজরে অনেকগুলি তথ্য চোখে পড়ে, ফলে পড়ার গতি বাড়ে। ছোট ছোট খণ্ড দিয়ে শুরু করে ধীরে ধীরে এর আকার বাড়ালে, আপনার মস্তিষ্ক একসাথে অনেকগুলি শব্দ বুঝতে পারবে, ও মনে রাখতে পারবে। এতে শুধু পড়ার গতিই বাড়ে না, বরং বোঝার ক্ষমতা বাড়ে, কারণ আলাদা শব্দের তুলনায় কয়েকটি শব্দ বা বাক্যাংশ পড়লে কনটেক্সট ভালভাবে বোঝা যায়।
.
৪. সাবভোকালাইজেশন কমান
সাবভোকালাইজেশন হল পড়ার সময় মনে মনে প্রতিটা শব্দ উচ্চারণ করা। এটি পড়া বুঝতে অনেক ক্ষেত্রে সাহায্য করলেও পড়ার গতি কমিয়ে দেয়।
সাবভোকালাইজেশন কমাতে, বিষয়বস্তু ভিজ্যুয়ালাইজ করা কিংবা মনে মনে পড়া ছাড়াই বুঝতে চেষ্টা করুন। নিরবে পড়ার চর্চা করুন ও চোখ বুলিয়ে তথ্য মনে রাখার চর্চা করলে দ্রুত ও কার্যকরভাবে পড়তে পারবেন।
.
৫. চোখের পরিসর বাড়ান
চোখের পরিসর বাড়ানোর অর্থ হল চোখের প্রান্তের দিকের দৃষ্টিসীমা বাড়ানো, যাতে এক নজরে বেশ কিছু শব্দ চোখে পড়ে।
খের প্রান্তের দৃষ্টিসীমা বাড়ানোর অনুশীলন কাজে আসতে পারে। যেমন, মার্কার রাখা অথবা একবারে লেখার বড় একটি অংশ পড়ার সুবিধা দেয়, এমন সফটওয়্যার ব্যবহার করা। এতে পড়ার গতি বাড়বে।
.
৬. পড়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করুন
বই পড়ার ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সময় জুড়ে পড়া কিংবা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বেশি পড়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারেন। যেমন, ৫-১০ মিনিটের জন্য টাইমার সেট করে সেই সময়ের মধ্যে কতখানি পড়তে পারেন তা দেখুন।
নিজের অগ্রগতি ট্র্যাক করা ও ধীরে ধীরে লক্ষ্য বাড়ানোর মাধ্যমে কম সময়ের মধ্যে বেশি পড়তে পারবেন। অগ্রগতি মনিটর করলে লক্ষ্যে স্থির থাকা যায়, ও ক্রমান্বয়ে আরও ভাল করা সম্ভব হয়।
.
৭. মনোযোগ নষ্ট করে এমন জিনিসপত্র সরিয়ে রাখুন
পড়ার জন্য মনোযোগ নষ্ট করে এমন জিনিসপত্র বিহীন শান্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে। এমন একটি জায়গা খুঁজে নিন, যেখানে পড়ার সময় কেউ এসে বিরক্ত করবে না।
এছাড়া পড়ার সময় অন্য কিছু করা থেকে বিরত থাকুন। পড়ার দিকে পুরোপুরি মনোযোগ দিলে মনোযোগ ধরে রেখে দ্রুতগতিতে পড়া সম্ভব হয়। সহজেই মনোযোগ আসে এমন কোথাও পড়তে বসলে পড়ার গতি বেড়ে যায়।
.
৮. দ্রুত পড়তে সাহায্য করে এমন টুল ব্যবহার করুন
চর্চার মাধ্যমে পড়ার গতি বাড়ানোর জন্য বেশ কিছু অ্যাপ ও সফটওয়্যার আছে। Spreeder, Readsy, ও Reedy এর মত অ্যাপগুলির ‘র্যাপিড সিরিয়াল ভিজ্যুয়াল প্রেজেন্টেশন’ ব্যবহার করে দ্রুতগতিতে পড়তে পারেন।
এই টুলগুলি কাঠামোবদ্ধ চর্চা ও ফিডব্যাকের সুযোগ করে দেয়, ফলে পড়ার গতি বাড়ানো সহজ হয়। অনলাইন কোর্স ও টিউটোরিয়াল থেকে মূল্যবান মতামত ও পড়ার গতি বাড়ানোর নানারকম টিপস পেতে পারেন।
.
৯. নিয়মিত চর্চা করুন
যেকোনো দক্ষতার মতই, দ্রুতগতিতে পড়ার জন্যও দরকার নিয়মিত চর্চা। ওপরে উল্লিখিত কৌশলগুলি চর্চার জন্য প্রতিদিন কিছুটা সময় রাখুন। ধীরে ধীরে কঠিন বিষয়ে পড়া শুরু করুন, ও পড়ার গতি বাড়ান।
নিয়মিত চর্চা কেবল আপনার পড়ার গতিই বাড়াবে না, কী পড়ছেন সেটাও সহজে বোঝা ও মনে রাখার সক্ষমতা বাড়াবে। পড়ার গতি বাড়ানোর ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা অত্যন্ত দরকারি।
.
১০. ভোকাবুলারি বা শব্দভাণ্ডার বাড়ান
শব্দভাণ্ডার বিস্তৃত থাকলে কম সময়ের মধ্যে সহজে শব্দ চিনতে ও বুঝতে পারবেন, যা দ্রুতগতিতে পড়ার জন্য দরকারি।
নানারকম লেখা, যেমন বুঝতে কষ্টকর লেখা, আপনার ভাষাগত দক্ষতা বাড়াবে। বিভিন্ন শব্দ ও বাক্যাংশের সাথে আপনি যত বেশি পরিচিত হবেন, তার অর্থ বুঝতে তত কম কষ্ট করতে হবে, ফলে পড়ার গতি বাড়বে। ভোকাবুলারি বা শব্দভাণ্ডার বিস্তৃত হলে পড়ার গতি ও বোঝার ক্ষমতা দুই’ই বাড়বে।
.
১১. পড়ার পরিবেশ গুছিয়ে নিন
মনোযোগ ধরে রাখা ও ক্লান্তি এড়ানোর জন্য বই পড়ার আরামদায়ক পরিবেশ দরকার। ভাল পশ্চার বা অঙ্গভঙ্গি ও আরামদায়ক আসনে বসে বই পড়ুন, যাতে শারীরিকভাবে কোনো অস্বস্তি না হয়। পর্যাপ্ত আলো চোখের স্ট্রেইন কমায়, ও কার্যকরভাবে পড়তে সাহায্য করে। পড়ার জন্য আরামদায়ক পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে দীর্ঘসময় একটানা বই পড়া যায়।
.
১২. বিরতি নিন
নিয়মিত বিরতি নিলে মানসিক অবসাদ দূর হয়। লম্বা সময় ধরে বই পড়লে ক্লান্তি দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে ছোট বিরতি মনোযোগ ধরে রাখতে ও বুঝতে সাহায্য করে।
মস্তিষ্ককে বিরতি দেওয়ার মাধ্যমে নতুন ফোকাস ও শক্তি নিয়ে পড়ায় ফিরতে পারবেন। পড়ার সময় নিয়মিত বিরতি নিলে সতর্ক ও সাবধান থাকা সম্ভব হবে, ফলে তাড়াতাড়ি ও কার্যকরভাবে পড়তে পারবেন।
পড়ার সময় এই কৌশলগুলি কাজে লাগালে ধীরে ধীরে আপনার পড়ার গতি বাড়বে, কী পড়ছেন তাও সহজেই বুঝতে পারবেন এবং উপভোগ করতে পারবেন। এই কৌশলগুলির নিয়মিত চর্চা ও ধারাবাহিক প্রয়োগ কার্যকরভাবে পড়ার সক্ষমতা বাড়াবে।