জীবন থেকে সবকিছু ফেলে দেয়া সম্ভব। কিন্তু হুমায়ূন আহমেদকে না।



২০১২ সালের ২৫ মে। 

নুহাশ পল্লীতে হুমায়ূন আহমেদের ইন্টারভিউ নিতে গিয়েছিলাম। তখন আমি নিজের হাতে স্যারের এই ছবিটি তুলেছিলাম। 


যারা হুমায়ূন স্যারকে চিনেন, তারা খুব ভালো করেই জানেন, স্যারের ছবি তোলা কত কঠিন কাজ। এ কারনেই দেখবেন, স্যারের বেশিরভাগ ছবিতেই কোন পোজ নেই, হাসিও নেই। গম্ভীর ভাব।


কিন্তু আমি সাহস করে বললাম, 'স্যার হাসিহাসি মুখে যদি একটু পায়ের ওপর পা তুলে বসতেন, তাহলে সুন্দর একটা ছবি তুলতে পারতাম'।

 

স্যার আমার দিকে গম্ভীর একটা লুক দিয়ে পায়ের ওপর পা তুলে বসলেন ঠিকই, কিন্তু হাসলেন না। 


হাসি না থাকুক। পায়ের ওপর পা তুলে বসছে, এটাই আমার জীবন ধন্য করার জন্য যথেষ্ট। ব্যস আমি টপাটপ বেশ কিছু ক্লিক করে ফেললাম।   


কম্পিউটারের হার্ড ডিস্ক ফুল হয়ে গেছে। খালি করতে গিয়ে স্যারের ছবির ফোল্ডারটি খুঁজে পেলাম। খুব যত্ম করে গুছিয়ে রেখেছিলাম।  


জীবন থেকে সবকিছু ফেলে দেয়া সম্ভব। কিন্তু হুমায়ূন আহমেদকে না। তার ছবির ফোল্ডারটিও না।


স্যার আমার ইন্টারভিউতে বলেছিলেন, 'সত্যিই যদি পুনর্জন্ম বলে কিছু থেকে থাকে, তবে আমি মিসির আলী হয়ে ফিরতে চাই'।


ইশ, সত্যিই যদি পুনর্জন্ম থাকতো! তবে স্যারকে মিসির আলী রূপে ফিরে পেতাম। কিন্তু আফসোস, পুনর্জন্ম বলতে কিছু নেই। 


ইন্টারভিউ শেষে হুমায়ূন স্যার তার প্রিয় নুহাশ পল্লী ছেড়ে ঢাকায় ফিরেছিলেন। তারপর চলে গিয়েছিলেন নিউ ইয়র্ক। ক্যান্সারের সঙ্গে শেষ লড়াই করতে। কিন্তু স্যার হেরে গিয়েছিলেন। 


আমার পরিস্কার মনে আছে। তিনি নুহাশ পল্লী ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। বারবার ঘুরেঘুরে ফ্যালফ্যাল চোখে বৃক্ষ-লতা-পাতা দেখছিলেন। খুব মায়া নিয়ে দেখছিলেন। ছুঁয়ে ছুঁয়ে আদর করছিলেন। 


হয়তো স্যার টের পেয়েছিলেন, এ দেখাই শেষ দেখা। আর কখনো, কোনদিনও— পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে...

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url