বাংলাদেশের ইন্টারনেট ব্যবস্থা।
বাংলাদেশে ইন্টারনেটের প্রচলন শুরু হয় ১৯৯৬ সালে। গত কয়েক দশকে দেশটি ইন্টারনেট ব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেছে। বর্তমানে, ইন্টারনেট ব্যবহারের পরিধি গ্রাম থেকে শহর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে অফিস-আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন খাতে ব্যাপকভাবে বিস্তৃত।
![]() |
ছবি: Pinterest |
ইন্টারনেটের প্রসার
বাংলাদেশের ইন্টারনেটের বিস্তার শুরুতে ছিল সীমিত। তবে, ২০১০ সাল থেকে ৩জি এবং পরবর্তী সময়ে ৪জি মোবাইল নেটওয়ার্ক চালু হওয়ার পর ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। আজ, দেশের প্রায় সব অঞ্চলে মোবাইল ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা রয়েছে। সরকারি এবং বেসরকারি টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠানগুলো এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (BTRC) এর তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রায় ১৩ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে, যা দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮০ শতাংশ।
ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট
মোবাইল ইন্টারনেটের পাশাপাশি, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের চাহিদাও দেশে বাড়ছে। শহরাঞ্চলে উচ্চগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের সেবা বেশিরভাগ স্থানেই পাওয়া যায়। অনেক প্রতিষ্ঠানে এবং বাড়িতে অপটিক্যাল ফাইবার প্রযুক্তির মাধ্যমে উচ্চগতির ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতেও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা সম্প্রসারণের চেষ্টা চলছে।
ইন্টারনেটের ব্যবহার ও চ্যালেঞ্জ
ইন্টারনেট ব্যবহারের দিক থেকে বাংলাদেশের মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, অনলাইন কেনাকাটা, এবং শিক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে বেশি সময় ব্যয় করে। ই-কমার্সের প্রসারের পাশাপাশি ই-লার্নিং এবং ফ্রিল্যান্সিং খাতেও ইন্টারনেট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
তবে, বাংলাদেশের ইন্টারনেট ব্যবস্থায় কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ইন্টারনেট সেবার মান অনেক ক্ষেত্রে প্রত্যাশা অনুযায়ী নয়। বিশেষ করে, গ্রামীণ এলাকায় ইন্টারনেটের গতি এবং স্থিতিশীলতা নিয়ে এখনও সমস্যা রয়েছে। এছাড়াও, সাইবার নিরাপত্তার অভাব এবং ডিজিটাল বিভাজন একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
ভবিষ্যতের দৃষ্টি
বাংলাদেশ সরকার ২০২৬ সালের মধ্যে ৫জি প্রযুক্তি চালুর পরিকল্পনা নিয়েছে, যা ইন্টারনেট ব্যবস্থায় নতুন মাত্রা যোগ করবে। এছাড়া, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবার পরিধি ও মান উন্নয়নে কাজ চলছে। দেশের প্রতিটি নাগরিককে ডিজিটাল সুবিধার আওতায় আনার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে, যা দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
বাংলাদেশের ইন্টারনেট ব্যবস্থা গত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। যদিও এখনও কিছু চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান, তবে প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং সরকার ও বেসরকারি খাতের যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে এগুলো অতিক্রম করা সম্ভব হবে। ইন্টারনেটের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশ আরও অগ্রসর হবে এবং বিশ্ব দরবারে একটি ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণে অগ্রসর হবে।